Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ক্রীড়া সংগঠন

সামজিক সংগঠন বলতে সেই সংগঠন সমুহকে বুঝায়, যা কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের সমন্বয়ে শিক্ষা, সংষ্কৃতি ইতাদি সহ সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন কল্পে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত হয়। দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত অনেক গুলি সামাজিক সংগঠনের গঠনতন্ত্র পড়ে দেখছি এদের সবকটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমুহ মুলত একই – বিভিন্ন ভাবে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করা।

একথা ধ্রুব সত্য যে, এসব সংগঠন গুলি যদি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করতো তাহলে, শিক্ষা, সংষ্কৃতি, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারতো। ফলশ্রুতিতে সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন হতো, এমন কি সামজিক শান্তি শৃংখলা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেত। এক কথায় বলা যায় সামাজিক উন্নয়নে, সামাজিক সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারতো; যদি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করতো।

কিন্তু বেশীরভাগ সংগঠনের ক্ষত্রেই বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বৃটেনেই প্রবাসীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জেলা, থানা, ইউনিয়ন, এমন কি গ্রাম ভিত্তিক সংগঠনের অভাব নাই। এমন কি অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামে একই জেলা, থানা, ইউনিয়ন ভিত্তিক একাধিক সংগঠন ও রয়েছে। আবার দেশেও একই এলাকায় একাধিক সংগঠন রয়েছে। একটু ভাবুন, সকলের উদ্দেশ্য যদি হয় সামাজিক উন্নয়ন, তাহলে একই জেলা, থানা বা ইউনিয়িনের একাধিক সংগঠন কেন?

বৃটেনে অনেকগুলি সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছি। আবার ফেইসবুকের মাধ্যমে এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলাপ করে দেশের অনেক সংগঠন সম্পর্কে জেনেছি। এই আলোকেই আমার এই লিখা। কোন সংগঠনকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করা আমার উদ্দেশ্য নয় বিধায় কোন সংগঠনের নাম লিখবো না। তবে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে প্রমাণ সহ অসংখ্য সংগঠনের নাম বলতে পারবো।

১। বেশীরভাগ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের অলিখিত মূখ্য উদ্দেশ্য থাকে পদবী লাভ করা। সভাপতি, সেক্রেটারি বা কার্যকরী কমিটিতে একটি পদ চাই! এদের ধারণা এসব পদবীর প্রচারে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সংগঠনে পদবী থাকার কারনে দেশে বিদেশে সমম্বর্ধনা পাওয়া যায়। আর যখই এই কাংখিত পদবী পাওয়া যায় না, তখনই উন্নয়নের উদ্দেশ্য চলে যায় ডাস্টবিনে। শুরু হয় গ্রুপিং, ফলশ্রুতিতে একই থানা বা ইউনিয়ন ভিত্তিক আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাও সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ।

একটা অবাক করা বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি, থানা ভিত্তিক একটি সংগঠনের অভিষেক অনুষ্ঠানে গেলাম। যার নিমন্ত্রনে গিয়েছিলাম, ২/৩ সপ্তাহ পরে তিনি আরেকটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেন। গিয়ে আমি অবাক হলাম, ব্যানারে দেখলাম সংগঠনের নামে আগের চেয়ে একটু পরিবর্তন। তাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, আগের সংগঠন প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। কথা ছিল তাকে সভাপতি করা হবে। কিন্তু কতিপয়ের যোগসাজসে শুধু মাত্র টাকাওয়ালা হওয়ায় আরেকজনকে সভাপতি করার কারনে তিনি নতুন সংগঠন করেছেন। আবার ২/৩ জনের নাম সংগঠন ভাংগনের কিংবদন্তী  হয়ে আছে। উনারা নাকি যে সংগঠনে ঢুকেন, সেথায় সভাপতি  বা সেক্রেটারি না করলে গ্রুপিং করে নতুন আরেকটি সংগঠন করেন। যে সব সংগঠন উনাদের পদবী লোভে ভাংগনের স্বীকার হয়েছে ঐসব সংগঠনের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ফোন করে বা মেসেজ দিয়ে বলেন, এদের নোংরা মানসিকতা সম্পর্কে লিখতে। আমি সোজা বলি, মানবিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমার লিখা হলেও কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে আমি লিখতে নারাজ। তুমি একজনকে ফোনে আরেকজনের নিকট খারাফ বলতে পারলে, তুমি লিখছ না কেন? এটা হিপোক্রেসী, আমি হপোক্রেসীকে ঘৃণা করি।

২। অনেক সংগঠন আবার সামাজিক উন্নয়নের পরিবর্তে সম্মাননা ও পদবী বানিজ্যে লিপ্ত। এদের সম্মাননা পদবী বানিজ্যের চাপে সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে অপসংষ্কৃতি। বেশীর ভাগ ক্ষত্রেই মোটা অংকের দানের বিনিময়ে বা ব্যক্তিগত পরিচয়ের কারণে নির্বিচারে বিভিন্ন উপাধি দেওয়া হয়; যোগ্যতার বিচারে নয়। কৃতি, বিশিষ্ট, সমাজপতি, শিল্পপতি থেকে শুরু করে রত্ন, সাগর, আকাশ, বাতাস… যা ইচ্ছা তাই সম্মাননা পদবী দিতে পারে। অসুবিধা নেই, ক্লিনার, ড্রাইভার, বাবুর্চি যে কেউ টাকা দিলেই এসব সংগঠন থেকে যে কোন সম্মাননা উপাধী পেতে পারে। এখানে একটি কথা বলতে চাই, প্রকৃত গুণীজন বা যগ্যতম দেরকে সম্বর্ধিত করতে আমি উৎসাহী, এতে অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি পায়।

আমার বিষেষ পরিচিত একজন, একটি সংগঠনের সাথে জড়িত। কয়েকদিন আগে আমাকে ফোন করে, একজন ব্যারিস্টারের নাম বলে বললো, উনাকে তাদের সংগঠন থেকে সম্মাননা দেওয়ার জন্য সংগঠনের কয়েকজন তার মতামত চেয়েছেন। যারা মতামত চেয়েছেন তারা ঐ ব্যারিস্টারের অতি ঘনিষ্ট। সে আমার আভিমত জানতে চাইলে তাকে বললাম, প্রতমত যার কথা বলেছে উনি বার কাউন্সিলের আইনানুসারে Practicing ব্যারিস্টার নয়। যদি ব্যারিস্টার হিসাবে সম্মাননা দিতে হয় তবে হাতেগুনা ২/৪ জন হলেওতো বাংলাদেশী Practicing ব্যারিস্টার  আছেন, তাদেরকে দিতে পারে;  আরও কিছু বুঝালা। জানিনা এর পর কি হয়েছে।

সম্মাননা প্রাদান, গ্রহন ও নামের সাথে উপাধী লিখার নিয়ম সম্পর্কে অনেক সংগঠন ও ক্রেতা আসলেই অজ্ঞ। কোন সম্মাননা মূলক উপাধী আইনানুগ ভাবে বৈধতার জন্য নিম্নোক্ত তিনটি শর্ত বাধ্যতামূলকভাবে পূরণ করতে হবে।

প্রথমত: সম্মাননা উপাধী রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে।

দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সম্মাননা প্রদান করতে হবে।

তৃতীয়ত: সম্মাননা উপাধীর সনদ থাকতে হবে, যা আইনানুগ অনুমোদিত ব্যক্তি কর্তক স্বাক্ষরিত হতে হবে।

এই শর্ত সমুহ পূরণ না করে কেউ সম্মাননা উপাধী দিলে এবং কেউ নামের সাথে কোন সম্মাননা উপাধী ব্যবহার করলে, তা যে কোন দেশের আইনানুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ এবং যে কোন নাগরিক এর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।

অথচ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যে সব সামাজিক সংগঠন সম্মাননা বানিজ্যে লিপ্ত এদের ৯৫% এর দেশে বা বিদেশে আইনানুগ রেজিস্ট্রেশন ই নাই। অর্থাৎ সংগঠনেরই আইনানুগ বৈধতা নাই। এদিক থেকে এগুলিকে হাইব্রিড সামাজিক সংগঠন বললেও ভুল হবে না। যার নিজেরই আইনানুগ বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে তার দেওয়া সম্মাননার বৈধতা কতটুকু তা পাঠকরাই বিবেচনা করবেন।

আশার আলো একেবারে নিভে যায় নাই; কয়েকটি সংগঠন যে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করছে না, তা কিন্তু নয়। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। এগুলি আবার অনেক সময় হাইব্রিড সংগঠনের দাপটে উন্নয়ন কাজ করতে গেলে এলাকায় নোংরা রাজনীতির চাপে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

উন্নউনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেলে সামাজিক সংগঠন সত্যিকার অর্থেই সার্বিক সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। এর শত শত প্রমাণ আছে, কতিপয় সামাজিক সংগঠন সরকারের সহযোগীতা ছাড়াই নিজের এলাকা বা গ্রামকে আদর্শ এলাকা বা গ্রামে রুপান্তরিত করেছে। তাই আমদের সকলের উচিৎ হবে, সভাপতি, সেক্রেটারি ইত্যাদি পদবীর লোভ বিসর্জন দিয়ে, সম্মাননা উপাধী বানিজ্যের চিন্তা না করে; সত্যিকার উন্নয়নমূলক কাজের সংকল্প নিয়ে সংগঠন করা। তা করতে পারলেই সম্ভব হবে সমাজের উন্নয়ন করা। নিজের এলাকা বা গ্রামকে আদর্শ এলাকা বা গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। আর সাধারণ মানুষ ও সম্মানের সাথে সংগঠনকে স্মরণ করবে অনন্ত কাল।

চান্দেরকান্দি ইউনিয়নে দুটি সংগঠন রয়েছে।

 

১। চেতনা বিকাশ যুব সংঘ।

২। নজরপুর তরুণ সংঘ।